সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকদের কেন্দ্রীয় চার দফা দাবির কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন গতকাল মঙ্গলবার সাতক্ষীরার চারটি সরকারি বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। পরীক্ষা বিষয়ে পক্ষে-বিপক্ষে শিক্ষার্থীদের দু’গ্রুপে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এসময় জেলায় কর্মরত সাংবাদিকরা সংবাদ সংগ্রহে গেলে তারা ছাত্রদের দ্বারা হেনস্তার শিকার হন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শিক্ষার্থী বলেন, “সারাবছর নিয়মিত পড়াশোনা করেও ফাইনাল পরীক্ষার জন্য পরপর দুই দিন আমাদের পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। কিছু সহপাঠী, যারা সারাবছর পড়াশোনা করেনি, তারা পরীক্ষা না দিয়ে অটোপাস পেতে চাইছে। তারা যে-সব স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়েছে, সেই স্যারের পক্ষ নিয়েছে। আমরা যখন এর বিরোধিতা করি, তখন তারা আমাদের মারধরের হুমকি দেয়।”
হাবিবুর রহমান নামে একজন অভিভাবক বলেন, “সরকারি বিদ্যালয়ে পড়াশোনার খুব খারাপ অবস্থা। এখানকার শিক্ষকরা ক্লাসে লেখাপড়া না করিয়ে কোচিংয়ে ব্যস্ত থাকেন।”
নাদিরা সুলতানা নামে এক অভিভাবক বলেন, “এবার যারা এসএসসি দেবে তারা করোনার সময় পিএসসি-জেএসসি দিতে পারেনি। এখন তাদের টেস্ট পরীক্ষা খুব গুরুত্বপূর্ণ। পরীক্ষা বন্ধ থাকলে বড় ক্ষতি হবে।”
এদিকে মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে সাতক্ষীরা সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে পরীক্ষার পক্ষে-বিপক্ষে শিক্ষার্থীদের দুটি দল তৈরি হয়। বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে তারা হাতাহাতি ও মারামারিতে লিপ্ত হয়। এতে কয়েকজন আহত হয়। মারামারির ফুটেজ ফটো সাংবাদিকরা ধারণ করলে শিক্ষার্থীদের কয়েকজন তেড়ে আসে। এমনকি তারা ক্যামেরায় ধারণকৃত ফুটেজ সাংবাদিকদের মুছে দিতে বাধ্য করে। শহরের মিনি মার্কেটে অবস্থিত অফিসে তারা সাংবাদিকদের ওপরে চড়াও হয় ও আস্ফালন করতে থাকে।”
যমুনা টিভির জেলা প্রতিনিধি আকরামুল ইসলাম বলেন, “শিক্ষকদের কর্মবিরতির খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থী আমাদের ঘিরে ধরে মোবাইল ও ক্যামেরা কেড়ে নিয়ে সব ভিডিও ডিলিট করে দেন। এসময় ছাত্ররাও বারবার বলতে থাকে, আমাদের এই ভিডিও প্রকাশ হলে স্কুলের মান-সম্মান নষ্ট হবে।”
ডিবিসি নিউজের জেলা প্রতিনিধি এম বেলাল হুসাইন বলেন, “সংবাদ কাভার করে অফিসে ফেরার পর সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী এসে ভিডিও ডিলিট করতে বলে এবং ফোন চেক করতে চায়। পরে তারা এক টিভি চ্যানেলের সাংবাদিককে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। শিক্ষার্থীদের এই ধরনের আচরণে হতবাক হয়েছি।”
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাসেম বলেন, “মাধ্যমিক পর্যায়ের কোমলমতি কিশোর শিক্ষার্থীরা তুচ্ছ বিষয়ে এমন ভয়ানক আচরণ করতে পারে, সেটা ভাবতেও লজ্জা লাগে।”
শিক্ষার্থীদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার না করে জাতি গড়ার কারিগর হিসেবে ব্যবহার করার জন্য শিক্ষকদের কাছে অনুরোধ করেন তিনি।
সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম টুকু বলেন, “পরীক্ষার পক্ষে-বিপক্ষে দু’গ্রুপ হওয়ায় উত্তেজনা তৈরি হয়। পরে আইন-শৃখলা বাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। আমি শিক্ষকদের দাবির পক্ষে, কিন্তু পরীক্ষা বন্ধ করে আন্দোলন হওয়া ঠিক নয়।”
সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা অফিসার আবুল খায়ের বলেন, “মন্ত্রণালয় থেকে পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যারা পরীক্ষা বন্ধ করেছে তাদের নাম মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়ার ঘটনাও দুঃখজনক।”
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মিজ আফরোজা আখতার বলেন, “আমি স্পষ্টভাবে বলেছি-পরীক্ষা অবশ্যই চালিয়ে নিতে হবে। কিন্তু শিক্ষকরা পরীক্ষা বর্জন করে পরীক্ষা নেননি।
সাংবাদিকদের হেনস্তার ঘটনাও দুঃখজনক। যারা এতে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
খুলনা গেজেট/এনএম

